পৃথিবীর উন্নতরাষ্ট্র গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সামর্থ হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানে স্যাটেলাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
স্যাটেলাইট কি?
স্যাটেলাইট হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ। অর্থাৎ এটি একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। যা সমস্ত পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টা ঘুরবে ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবে। স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খবর আমরা নিমিষেই পেয়ে যাবো।
স্যাটেলাইটকে রকেট বা স্পেস শাটলের কার্গো বে-এর মাধ্যমে কক্ষপথে পাঠানো হয়। পাঠানোর সময় রকেট নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয় ইনার্শিয়াল গাইডেন্স সিস্টেম (আইজিএস) মেকানিজম। পৃথিবীর অভিকর্ষ পার হতে রকেটকে ঘণ্টায় ২৫ হাজার ৩৯ মাইল ত্বরণে ছুটতে হয়। স্যাটেলাইট স্থাপনের সময় কক্ষীয় গতি ও তার জড়তার ওপর পৃথিবীর অভিকর্ষের যে প্রভাব রয়েছে, এর জন্য সামঞ্জস্য বিধান করতে না পারলে স্যাটেলাইট এ অভিকর্ষের টানে ফের ভূপৃষ্ঠে চলে আসতে পারে। এ জন্য স্যাটেলাইটকে ১৫০ মাইল উচ্চতাবিশিষ্ট কক্ষপথে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭ হাজার মাইল গতিতে পরিভ্রমণ করানো হয়। মূলত গতিবেগ কত হবে, তা নির্ভর করে স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে কত উচ্চতায় রয়েছে, তার ওপর। পৃথিবী থেকে ২২ হাজার ২২৩ মাইল উপরে স্থাপিত স্যাটেলাইট ঘণ্টায় ৭০০ মাইল বেগে পৃথিবীকে আবর্তন করে। পৃথিবীর সঙ্গে স্যাটেলাইটও ২৪ ঘণ্টা ঘোরে। তবে ভূ-স্থির বা জিওস্টেশনারি উপগ্রহগুলো এক জায়গাতেই থাকে। এগুলো আবহাওয়া ও যোগাযোগ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট উপবৃত্তাকার পথে ঘোরে। সাধারণত ৮০-১ হাজার ২০০ মাইল উচ্চতাবিশিষ্ট কক্ষপথে বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট পাঠানো হয়। কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে স্যাটেলাইটটি কত উচ্চতায় বসবে। যেমন উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে গবেষণা, বণ্যপ্রাণীর চরে বেড়ানো পর্যক্ষেণ, অ্যাস্ট্রোনমি এবং পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার জন্য সায়েন্স স্যাটেলাইটকে বসানো হয় ৩০ হাজার থেকে ৬ হাজার মাইল উচ্চতায়। আবার গোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয় ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার মাইল উচ্চতায়। এক এক ধরনের স্যাটেলাইটের বৈশিষ্ট্য ও গঠন প্রণালী একেকরকম। তবে সব স্যাটেলাইটের মধ্যেই সাধারণত কিছু মিল আছে।
স্যাটেলাইটের শরীর ধাতু সংকরের ফ্রেম দিয়ে তৈরি। একে বলে বাস। এতেই স্যাটেলাইটের সব যন্ত্রপাতি থাকে। প্রত্যেক স্যাটেলাইটে থাকে সোলার সেল এবং শক্তি জমা রাখার জন্য ব্যাটারি। এর পাওয়ার সিস্টেম প্রসেসকে পৃথিবী থেকে সবসময় মনিটর করা হয়। স্যাটেলাইটে একটি অনবোর্ড কম্পিউটার থাকে যা একে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করে। স্যাটেলাইটের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট হল এর রেডিও সিস্টেম ও অ্যান্টেনা।
স্যাটেলাইটের প্রকারভেদঃ
প্রত্যেকটি স্যাটেলাইট ডিজাইন করা হয় ফর অ্যা স্পেসিফিক টাস্ক। নির্দিষ্ট কাজের ভিত্তিতে স্যাটেলাইটগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সব স্যাটেলাইটের কাজ বার্যক্ষমতা এক নয়।
স্যাটেলাইটের প্রকারঃ- ১। ওয়েদার স্যাটেলাইট ২। কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট ৩। ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট ৪। আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট ৫। মিলিটারী স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু (স্যাটেলাইটের) সুবিধাঃ
বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট এবং রেডিওগুলো বিদেশি উপগ্রহের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে।বিটিআরসি’র হিসাবে, প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ডলার দিয়ে থাকে। বর্তমানে ১৯টি টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪০ লাখ ডলার ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশের নিজস্ব উপগ্রহ চালু হওয়াতে ভাড়া বাবদ অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।এসপিআই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্র“স ক্রাসলসকি বলেছিলেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার পর বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করতে পারবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস